তুর্কি জাতি কারা, ওঘুজ খান, কায়ি গোত্র আরতুগরুল গাজি এর ইতিহাস নিয়ে বাংলা বই
তুর্কি-জাতি ২০টি বংশে বিভক্ত ছিল। তন্মধ্যে ওঘুজ বংশটিই সবচেয়ে বেশি প্রসিদ্ধ। এই ওঘুজ তুর্কি বংশকেই তুর্কমেন বলা হয়। এই তুর্কমেন শব্দটি তুর্ক ও ইমান শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে গঠিত।কারণ, তুর্কিদের মধ্যে ওঘুজরাই প্রথম ইমানদার ছিল। তারাই প্রথম ইসলামের সুশীতল ছায়ায় আশ্রয়গ্রহণ করে।
দিরিলিস আরতুগ্রুল এর ইতিহাস
আরতুগ্রুল গাজী
তুরস্কের ইতিহাস বই pdf
তুর্কি জাতির ইতিহাস
সানজাক ই উসমান
ওঘুজ তুর্কি বংশটি আবার ২৪টি গোত্রে বিভক্ত ছিল। সেসব গোত্রের মধ্যে কায়ি গোত্র ছিল অন্যতম। উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা- আরতুগরুল গাজি ছিলেন এই কায়ি গোত্রেরই এক সুযোগ্য সন্তান।
আরতুগরুল গাজির বংশপরম্পরা উল্লেখ করলে আরও সহজে বুঝে আসবে-
~ওঘুজ
~গুক আলপ
~কিজিল বুগা
~কায়া আলপ
~সুলাইমান শাহ
~আরতুগরুল গাজি
উল্লিখিত বংশপরম্পরা দ্বারা বুঝা গেল- আরতুগরুল গাজির দাদা- কায়া আলপ থেকেই কায়ি গোত্রের নাম এসেছে। আর কায়া আলপের পরদাদা- ওঘুজ, যিনি আরতুগরুল গাজির ঊর্ধ্বতন পূর্বপুরুষ; তার থেকেই ওঘুজ তুর্কি বংশের নাম এসেছে।
উল্লেখ্য, কায়ি শব্দের অর্থ হলো শক্তি ও ক্ষমতাধর ব্যক্তি। এই গোত্রের প্রতীক ছিল 'সিনকির' নামীয় একপ্রকার বিশালাকৃতির বাজপাখির আকৃতি। আবার তাদের পতাকার মধ্যে IYI আকৃতির একটি চিহ্ন অঙ্কিত ছিল। এই চিহ্নের মধ্যে মাঝখানের Y দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- ধনুক, আর আশপাশের দুটি II দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- তির। এখান থেকেই বুঝে আসে- কায়ি গোত্র একটি যোদ্ধা জাতি ছিল।
১২২০ সালে মধ্য এশিয়ায় নরপিশাচ মোঙ্গলদের হামলার পর কায়ি গোত্রটি সুলাইমান শাহর নেতৃত্বে আনাতোলিয়ার আখলাতে এসে আশ্রয় নেয়। পরে সুগুতে এসে স্থায়ীভাবে বসবাস করে।
তাদের জীবনযাত্রা ছিল আদিম গোছের। যাযাবরদের মতো। তাঁবু টানিয়ে দলবদ্ধভাবে বসবাস করত। তাদের সমাজব্যবস্থা ছিল খুব সুন্দর।
বর্তমান তুরস্কের বিলেচিক (Bilecik) প্রদেশই তখনকার সুগুত। এই সুগুত ছিল কায়ি গোত্রের স্বর্গরাজ্য। আজও বিলেচিকে কায়ি গোত্রের অনেক নিদর্শনাদি পাওয়া যায়।
উসমানি সাম্রাজ্যের স্বপ্নদ্রষ্টা আরতুগরুল গাজি-লেখক আইনুল হক কাসিমি সম্পর্কে—
.
ইসলামি অঙ্গনে লেখালেখির জগতে তারুণ্যনির্ভর যে জাগরণ শুরু হয়েছে, তার প্রথম সারিতে আছেন বন্ধুবর আইনুল হক কাসিমী। কালির হরফে যারা উম্মাহর জন্য একে একে রচনা ও অনুবাদ করে যাচ্ছেন গ্রন্থের পর গ্রন্থ, তিনি তাদেরই একজন।
.
সিলেটে জন্ম-নেওয়া এই লেখক একাধারে যেমন প্রাজ্ঞ আলেমে দ্বিন, তেমনি চিন্তাশীল ও উম্মাহর জাগরণের স্বপ্নচারী। মুসলিমদের হারানো ইতিহাস-ঐতিহ্যকে কলমের আঁচড়ে পাঠকের সামনে তুলে ধরতে তিনি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
.
একসময়ে ইউরোপের ত্রাস তুরস্কের উসমানি খেলাফত, মানবেতিহাসের অন্যতম উন্নত সভ্যতা—আমাদের হারানো ফেরদাউস—আন্দালুস আর বিশ্বব্যাপী ক্রুসেডারদের নগ্ন কার্যক্রম প্রভৃতি বিষয়ে রয়েছে তার সবিশেষ আগ্রহ, নিরীক্ষা ও লেখালেখি। ইতোমধ্যে তিনি বেশ কিছু গ্রন্থ রচনা করে পাঠকমহলে সুনাম কুড়িয়েছেন।
.
অনবরত চেষ্টা করে যাচ্ছেন ভঙ্গুর এই উম্মাহর হৃদয়ে নতুন করে অবিরত চেতনার আলো জ্বালাতে; ফিরিয়ে আনতে তাদের হারিয়ে-যাওয়া ইমান আর সোনালি অতীতের অমলিন স্মৃতি।
.
তরুণ এই লেখকের উদ্দীপ্ত জীবনের জন্য শুভকামনা রইল।
FEATURES AVAILABILITY
Responsive books True
very easy to read True
resolution True
free True
আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন অটোমান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা প্রথম উসমানের পিতা। বলা হয়ে থাকে তিনিই অটোমান সাম্রাজ্যের ভিত প্রতিষ্ঠা করে যান। তাই তাকে এখনও মুসলিম বিশ্বে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা হয়। আরতুগ্রুল আনুমানিক (১১৯১-১১৯৮) খ্রিস্টাব্দের কোন এক সময়ে আহালাত শহরে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা-সুলেইমান শাহ, মাতা-হায়মা হাতুন।
আরতুগ্রুল গাজীকে ঐতিহাসিকরা শনাক্ত করেন প্রথম উসমানের সময়ের মুদ্রায় তার নাম দেখে। এই তথ্য ছাড়া ইতিহাসে তার কোন নির্ভরযোগ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তার নামের শেষে গাজী উপাধিটি মুসলমান যোদ্ধাদের দেওয়া হয় যারা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসে।
আরতুগ্রুল গাজী ছিলেন কায়ি গোত্রের দলপতি। কায়ি একটি অঘুজ তুর্কি বংশোদ্ভূত যাযাবর জাতি। এদের গোত্রের প্রধানের নাম ছিল সুলাইমান শাহ। এই গোত্রের লোকেরা ছিল নিষ্ঠাবান মুসলমান। সুলাইমান শাহের নেতৃত্বগুণে তার গোত্র ছাড়াও সেখানে অবস্থানকারী লোকেরা তার নেতৃত্বের ছায়াতলে আসতে লাগল। চেঙ্গিস খানের দস্যুতার কারণে সবাই তখন নিজের নিরাপত্তার জন্য নিজের উপরই নির্ভর করতে হচ্ছিল। সুলাইমান শাহ তার জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তার জন্য শক্তি বৃদ্ধি করেন এবং যাতে তারা কোনভাবে ক্ষতির সম্মুখীন না হয় সেই দিকে সতর্ক দৃষ্টি রাখতেন। অন্যদিকে খাওয়ারিজম সাম্রাজ্যের পতনের ফলে সুলাইমান শাহ খুব অল্প সময়ের মাঝেই অসংখ্য যোদ্ধা ও প্রচুর পরিমাণ যুদ্ধ সামগ্রী সংগ্রহ করতে সক্ষন হন।
চেঙ্গিস খান ৬২১ হিজরিতে (১২২৪ খ্রীঃ) সেলজুক সামাজ্য আক্রমণের জন্য এক বিরাট বাহিনী প্রেরণ করেন। কালের পরিক্রমায় সেলজুক সাম্রাজ্য তখন নিভু নিভু করছে। তখন সেলজুক সাম্রাজ্যের রাজধানী কনিয়াতে সিংহাসনে ছিল সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ সেলজুকী।
এই সময়ই সুলাইমান শাহের নিকট খবর পৌছল যে, মঙ্গোলরা আলাউদ্দিন কায়কোবাদের উপর হামলা চালিয়েছে। এই খবরে তিনি মর্মাহত হলেন। মুসলমান সুলতানের জন্য তার যথেষ্ট সহানুভূতি ছিল। তাই তিনি সুলতান কায়কোবাদকে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে নিজ গোত্রকে রওয়ানা হতে বলেন।
এই সময়ই ঘটে এক অভূতপূর্ব ঘটনা। সেলজুক ও মঙ্গোলেরা যখন যুদ্ধ করছিল তখন সেখানে যেয়ে উপস্থিত হয় সুলাইমান শাহের ছেলে আরতুগ্রুল গাজী। আরতুগ্রুল জানেন না যে কোন পক্ষ কারা। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে দুর্বল পক্ষের হয়ে তিনি যুদ্ধ করবেন। মঙ্গোল বাহিনী ছিল দুরন্ত ও দুর্ধর্ষ। তারা সহজেই সেলজুক বাহিনীকে কোণঠাসা করে ফেলে। সৌভাগ্যক্রমে তাই তার এই সিদ্ধান্তও তার পক্ষে আসে। তার সাথে ৪৪৪ জন যোদ্ধা নিয়ে সে সেলজুকদের পক্ষে যুদ্ধে নেমে পড়ে। তাদের বীরত্বে শেষ পর্যন্ত মঙ্গোলেরা টিকতে পারেনা। হারতে বসা এক যুদ্ধে এমন অভাবনীয় সাফল্যে সুলতান কায়কোবাদ উল্লসিত হয়ে আরতুগ্রুল গাজীকে আলিঙ্গন করে তার বহিঃপ্রকাশ ঘটান। ঠিক এমন সময়েই সুলাইমান শাহ তার বাহিনী নিয়ে সেখানে আসেন। সুলতান আলাউদ্দিন কায়কোবাদ তাদের দুজনকেই এই পুরস্কার স্বরূপ পরিদেয় দান করেন। তিনি খুশি হয়ে কায়ি গোত্রের জন্য আঙ্গোরা(বর্তমান আংকারা) কারাকা দাগের জায়গা বরাদ্দ করেন এবং সুলাইমান খানকে তার বাহিনীর সর্বাধিনায়ক নিযুক্ত করেন।
এখানে আলাউদ্দিন সালজুকীর তীক্ষ্ণবুদ্ধি ও দূরদর্শিতার কথা স্বীকার করতেই হবে যে, তিনি আরতুগ্রুলকে সাম্রাজ্যের সর্বশ্রেষ্ঠ এলাকাটি ঠিক করেন। কনিয়া সাম্রাজ্য প্রথমে বেশ বড় ছিল। কিন্তু রোমান আর মঙ্গোলদের চাপে পড়ে কনিয়ার একেবারে ভগ্নদশা হওয়ার উপক্রম হয়েছিল এবং আয়তন ক্রমশ হ্রাস পেতে পেতে তা একটি ক্ষুদ্র রাজ্যের আকার ধারণ করেছিল যার অস্তিত্ব যে কোন মুহূর্তে বিলীন হয়ে যেতে পারত।
কারাকা দাগের অবস্থান ছিল একেবারে রোমান সীমান্তে। ১২৫১ সালে আরতুগ্রুল নাইসিয়ান শহর থেবাসিওন জয় করেন। এর নতুন নামকরণ করা হয় সাগুত এবং এটি তার সাময়িক রাজধানী হয়। তার এই কৃতিত্বপূর্ণ কাজের পুরস্কারস্বরুপ সুলতান আলাউদ্দিন সালজুকী আরতুগ্রুলকে আরও কিছু এলাকা ছেড়ে দেন। পরবর্তীতে ১২৯৯ সালে তার সন্তান প্রথম উসমান কর্তৃক এখানেই অটোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী হিসাবে গড়ে উঠে। আরতুগ্রুল আরও শক্তিশালী হয়ে উঠায় রোমানদের দিক থেকে আক্রমণের আশংকা লোপ পায়। কিছুদিন পরে পিতা সুলায়মান শাহ ফুরাত অতিক্রম কালে পানিতে ডুবে মারা যান।
অটোমান ঐতিহ্য অনুযায়ী পিতার পর তার যোগ্য সন্তানকেই গোত্রের দলপতি করা হত। সেই ঐতিহ্য অনুযায়ীই ১২৩০ সালে আরতুগ্রুল এর পিতা সুলাইমান শাহের পর তাকেই গোত্রের দলপতি করা হয়।
এদিকে আরতুগ্রুল নিজ এলাকা শাসন করে যাচ্ছিলেন এবং নিজের রাজ্যের পরিধি ক্রমাগত বৃদ্ধি করছিলেন। এভাবে আরতুগ্রুলের একটি উল্লেখযোগ্য রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। ওদিকে মঙ্গোলদের ক্রমাগত আক্রমণ সেলজুক সুলতানকে ব্যতিব্যস্ত রাখে এবং শেষ অবধি ৬৪১ হিজরিতে মঙ্গোলরা কনিয়াকে একটি করদ রাজ্যে পরিণত করে। এতে অবশ্য আরতুগ্রুল কিছু হল না। কারণ তিনি ছিলেন মঙ্গোলদের ধরাছোঁয়ার বাইরে। মঙ্গোলরা এশিয়া মাইনরের এই ছোট ছোট রাজ্যগুলোর ব্যাপারে কোনরূপ নাক না গলিয়ে তাদেরকে তাদের মত থাকতে দেয়। ৬৩৪ হিজরি (১২৩৬-৩৭ খ্রীঃ) আলাউদ্দিন কায়কোবাদ মারা গেলে তার পুত্র গিয়াসুদ্দীন কায়খসরু কনিয়ার সিংহাসনে আরোহণ করেন।
আরতুগ্রুলের বিবাহ হয় সেলজুক সাম্রাজ্যের শাহজাদা নোমানের কন্যা হালিমা খাতুনের সাথে। ৬৫৭ হিজরিতে আরতুগ্রুলের একটি পুত্র সন্তান হয় তার নাম রাখা হয় উসমান খান। উনারই নামানুসারে তুর্কি বাদশাদের উসমানীয় সুলতান বা অটোমান সুলতান বলা হয়ে থাকে। ১২৮৭ সালে আরতুগ্রুল গাজী মারা যায়। তখন উসমান খানের বয়স ছিল ত্রিশ বছর। তখন সেলজুক সুলতান, আরতগ্রুলের পর উসমান খানকেই তার স্থলাভিষিক্ত করেন।
উসমানীয় তথা অটোমান সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসাবে তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন ও বীরত্ব-গাথা জীবনের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা আছে। তাই তাকে এই সাম্রাজ্যের ভবিষ্যৎ নির্মাতা হিসাবে আখ্যা দেওয়া হয়।
0 Comments